আরণ্যক টিটো ১৯৭৭ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। কবিতা লেখেন দীর্ঘদিন ধরে। যৌথভাবে সম্পাদনা করছেন সাহিত্যপত্র ‘চারবাক’। দীর্ঘদিন ধরেই বিন্দুতে তাঁর কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ২০১৮ এ কলকাতার মনফকিরা প্রকাশনী থেকে ‘ফুলেরা পোশাক পরে না’ নামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বাঙ্ময় থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘সহপাঠঃ গুপি গাইন, বাঘা বাইন’ নামে তার কবিতা নিয়ে দ্বীপ দিদারের আলোচনাগ্রন্থ। এই সাক্ষাৎকারটি ২০১২ এ বিন্দুর পক্ষ থেকে লিখিতরূপে গৃহীত হয়েছিল।
বিন্দু: আপনি কবিতা লেখেন কেন?
আরণ্যক: আমি আসলে কবিতা লিখিনা, যাপন করি! যাপিত জীবনের আনন্দবেদনাগুলোকে কথা ‘রাগে’ ‘প্রতিরাগে’ ‘বাদে’ ‘প্রতিবাদে’ ভাষা দিই!.. ভাষার মর্মরে বেজে ওঠে আমার সময় ও মেজাজ, রাজনীতি! প্রেম.. প্রতিপ্রেম, ..
বিন্দু: কবিতা লেখার ক্ষেত্রে আপনার প্রেরণার জায়গা আছে কি?
আরণ্যক: ‘প্রেরণা’ নামক কারও সাথে আমার জমে ওঠেনি কখনও, .. আমার জীবন যাপনের অনুভূতিগুলো, ভাবনায়, ফুটে ওঠে কথার মঞ্জরি হয়ে.. সকল বিষয় প্রেরণার মর্মে ধরা দেয়, একক প্রেরণা থাকে না, .. একটু কাব্য করে বলা যায়, প্রতিদিন নতুন সুন্দরে প্রেমে পড়ে চোখ, সুন্দর! সে যে বহুতমা!
বিন্দু: বর্তমান বাঙলাদেশে লিটল ম্যাগাজিন’র চরিত্র কেমন হওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
আরণ্যক: কি উচিত কি নাউচিত! এই বিষয়টা ভার করে মেজাজের উপর, বোধের উপর! কারা কী ভাবে বোধের পরিধি প্রকাশ করবে সেটা নির্ভর করবে তাদের দলগত চেতনার বাদ্যে, .. আমি যেটা অনুভব করি, লিটল ম্যাগাজিন একটা দার্শনিক মেজাজকে লালন করে বেড়ে ওঠে, .. এই মেজাজ সময় ও রাজনীতিময় জীবন প্রকাশের কাঙখাকে ধারন করে, .. দলগত বাদ্য ছাড়াও লিটল ম্যাগাজিন হতে পারে, একা একজন! একটা লিটল ম্যাগাজিন। যেমন, মাইকেল, রবিন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ। সময়ে সময়ে তাদের শিল্পের দর্শন পরিবর্তন করেছেন শিল্প ও জীবন দেখার ভঙিমা।.. কিন্তু, চর্যাগীতিকা, বৈষ্ণবসাহিত্য, আমাদের বাউলফকিরমুর্শিদজারিসারি সাহিত্যের দলগত চর্চা লিটল ম্যাগাজিনের ‘চরিত্র’কে ধারণ করে, .. যারই সময় ও মেজাজে প্রবাহিত আমাদের মধ্যবিত্ত মন ও মানস কাঠামো! আসলে তত্বের তাত্বিক বিরুদ্বাচরণতার নামটি, লিটল ম্যাগাজিন!
বিন্দু: ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা’ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
আরণ্যক: পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রময় প্রতিষ্ঠানে ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা’ আসলে ফ্যাশন না! প্রতিষ্ঠিত, ‘নির্মিত সত্যের’ ‘প্রতিসত্য’ময় জগৎ দর্শন, এর মর্ম! ভাবনার ‘বিপরীত ভাবনা’কে জাগাতেই প্রতিষ্ঠান বিরোধতা নম্যঃ। এর বেঁচে থাকা বিপ্লবের মহত্তর ল্য, ..
বিন্দু: আপনি তো ‘চারবাক’ সম্পাদনার সাথে যুক্ত। তো এই মূহুর্তে ‘চারবাক’ নিয়ে কি চিন্তা করছেন?
আরণ্যক: যুক্ত? যুক্ত হতে এসে বাঁধা পরলাম, মুক্তনীলিমায়! এই মুক্তনীলিমায় ‘সম্পাদনা’ বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবছিনা, ভাবনার গোচর রয়ে যায় অন্যখানে, অন্যতানে, কথায় কথায়, .. এই তানটুকু সম্প্রিতির, দলগত চেতনার। .. এই মঞ্চে আমি কথা বলেছি, .. এখন আসলে সেভাবে কাজ করতে পারছিনা! আমরা আসলে ব্যক্তিগত জীবনযাপনে এত বিচ্ছিন্ন যে আগের মত আর নিজেরা বসতে পারছিনা। আমি আসলে নিজেও সম্পাদনা, পত্রিকা করা এসব বিষয় উপভোগ করছিনা! বিপরীতে আমাদের মধ্যে আমার যে সৃজনশীলতা সে জায়গায় আমি উপভোগ করছি, সুতরাঙ আমি এ জায়গায় মজে আছি, .. ‘চারবাক’ হচ্ছে, হবে, .. হয়তো আমি আর সম্পাদনার সাথে যূক্ত থাকবোনা। কিন্তু, ম্যুভমেন্ট, লিটল ম্যাগাজিন চেতনা, দলগত বাদ্যে আমি বেজে যাবো, প্রতিসত্যে!
বিন্দু: এদেশের সাম্প্রতিক কবিতা সম্পর্কে আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়া জানতে চাচ্ছি।
আরণ্যক: ‘সাম্প্রতিক’ শব্দটির মাঝে একটা সীমাবদ্বতা আছে! এই সীমাবদ্ধতার মাঝে আমি আনন্দ পাইনা। আমার পাঠের মাত্রাটি একটু অন্য রকম! সমকালে অনেক কবিতা লেখা হচ্ছে, যতোটা চোখের আবহে ধরা পড়ছে ততোটা পরছি। সাম্প্রতিক ভেবে পরছিনা। এই পাঠটুকু আমাকে বলে, পড়ো, তোমার বোধের নামে, .. এই বোধের আলোয় দেখি, কিছুই হচ্ছেনা! যা হচ্ছে তার অধিক প্রচল, এর ভেতরেই প্রবাহিত, একটি গোপন স্রোত কিবা একটি নদীর সম্ভাবনা, .. এই সম্ভাবনা অতীতেও ছিল, যা আজ বর্তমান কিবা প্রচল! এই না হওয়ার ভেতরেই গোপন স্রোতটি হলো, সম্ভাবনা, উত্তরণের কাব্যগাঁথা, .. একটি গোপন কথা আজ বলে দিই; আমি আসলে কবিতা কে জানিনা, তবে এইটুকু জানি, অচেনা চোখের ক্যানভাসে কতো রকমারি ভাষা আছে, অর্থ আছে, অর্থহীনতার ..
এটুকু,
আমার পাঠের গোচর থেকে বলা, পাঠের বাহিরে আরও কত না পাঠ রয়ে যেতে পারে অগোচরে, ..
সমৃদ্ধ সাক্ষাৎকার।
উত্তরমুছুন